ঢাকা , শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , ৩ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাজশাহী বিভাগে মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রমে তীব্র শিক্ষক-কর্মকর্তা সংকট


আপডেট সময় : ২০২৫-০৯-১৮ ২০:৩৮:৫০
রাজশাহী বিভাগে মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রমে তীব্র শিক্ষক-কর্মকর্তা সংকট রাজশাহী বিভাগে মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রমে তীব্র শিক্ষক-কর্মকর্তা সংকট

মাসুদ রানা রাব্বানী, রাজশাহী:

রাজশাহী বিভাগের আটটি জেলায় মাধ্যমিক শিক্ষা দপ্তর এবং সরকারি মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে শিক্ষক-কর্মকর্তা- কর্মচারীর তীব্র সংকট দীর্ঘ তিন দশক ধরে চলে আসছে। এই জনবল সংকটের কারণে পুরো অঞ্চলে মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যক্রম কার্যত ভেঙে পড়েছে, যা শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

শিক্ষাসংশ্লিষ্টরা বলছেন, সুষ্ঠু তদারকির অভাবে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক শিক্ষা কোচিং সেন্টার নির্ভর হয়ে পড়েছে। রাজশাহী বিভাগের জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার আটটি পদের মধ্যে চারটিই শূন্য। বিদ্যালয় পরিদর্শকের চারটি পদের একটিতেও কোনো কর্মকর্তা নেই। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের ৬৭টি পদের মধ্যে ৩০টিই ফাঁকা। সহকারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার ৬৭টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন মাত্র আটজন, বাকি ৫৯টি পদ শূন্য। জেলা-উপজেলা শিক্ষা অফিসসহ স্কুলগুলোর প্রধান ও সহকারী প্রধান শিক্ষকের ২৪০টি পদের মধ্যে ১৫৮টি পদ শূন্য।

এর মধ্যে জেলা ও উপজেলা শিক্ষা অফিসগুলোর ১৫৮টি কর্মকর্তা পদের মধ্যে ১০০টিই শূন্য। রাজশাহী অঞ্চলের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর ৪৮টি পদের মধ্যে ৩৮টিতেই গত কয়েক বছর ধরে প্রধান শিক্ষক নেই। এমনকি গত সরকারের আমলে জাতীয়করণকৃত মাধ্যমিক স্কুলগুলোর অধিকাংশতেই প্রধান শিক্ষক নেই। সরকারি শিক্ষকদের ভারপ্রাপ্ত করে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জোড়াতালি দিয়ে চলছে।

রাজশাহী আঞ্চলিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, জেলার পুরাতন সরকারি মাধ্যমিক ৪৮টি স্কুলের মধ্যে ৩৮টিতেই প্রধান শিক্ষক নেই। এই স্কুলগুলোর মধ্যে ৯টি চলছে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দিয়ে এবং বাকিগুলোতে সহকারী শিক্ষকদের দিয়ে প্রধান শিক্ষকের কাজ করানো হচ্ছে।

শিক্ষাসংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজশাহী অঞ্চলের মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোর অধিকাংশ শূন্য পদ পূরণ হয়নি তিন যুগের বেশি সময় ধরে। সর্বশেষ ২০০৫ সালে সরকারি কর্ম কমিশনের মাধ্যমে সহকারী জেলা মাধ্যমিক অফিসার ও সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে মোট ৮৬ জন নিয়োগ পেয়েছিলেন।

এর আগে, ১৯৯৮ সালে সরকারি কর্ম কমিশনের মাধ্যমে সরাসরি ৫২ জনকে সরকারি মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।

এরপর আর কোনো পদে সরাসরি নিয়োগ হয়নি। যারা আগে, নিয়োগ পেয়েছিলেন তাদের অধিকাংশই অবসরে গেছেন বা অবসরের পথে। সরকারি মাধ্যমিক স্কুল ও জেলা উপজেলা শিক্ষা অফিসের পদগুলোতে সরাসরি পরীক্ষার মাধ্যমে ২০ শতাংশ পদ পূরণের নিয়ম থাকলেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে নিয়মিতভাবে পদোন্নতিও হয় না। বিধি অনুযায়ী মোট পদের ৮০ শতাংশ পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণের নিয়ম থাকলেও তা কার্যকর হচ্ছে না। 

এ বিষয়ে রাজশাহী অঞ্চল শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবদুর রশিদ বলেন, অনেক বছরই সরাসরি কর্মকর্তা ও সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে কোনো নিয়োগ হয় না। আবার পদোন্নতির মাধ্যমেও শূন্য পদগুলো পূরণ করা হয়নি। তার মতে, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর থেকে মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগকে আলাদা করে মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর করা হলে এই সংকট নিরসন সম্ভব।

শিক্ষার এই বেহাল দশা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ওপর দীর্ঘমেয়াদী নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করছেন, শিক্ষাবিদ ও অভিভাবকরা। অবিলম্বে এই জনবল সংকট নিরসনে সরকারি পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরীরি।



 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Banglar Alo News Admin

কমেন্ট বক্স

প্রতিবেদকের তথ্য

এ জাতীয় আরো খবর

সর্বশেষ সংবাদ